আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সারাদিন মেজাজ খিঁচড়ে আছে! ববি বিবিধ উপায়ে আমাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে। তবে সুমন আমাকে দেখলেই ফিক ফিক করে হাসছে- গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে! - দোস্ত দোস্ত না রাহা। এভাবে চলতে থাকলে শেষমেশ ক্লাউন হয়ে যাব। তাই মনের দুঃখ রাগ জ্বালা ক্ষোভ একপাশে সরিয়ে রেখে সবার থেকে বেশী লম্ফ ঝম্প শুরু করলাম।
লাল বেনারসিতে এলিনাকে কেমন লাগে সেটা আমার খুব দেখার ইচ্ছে।গতকাল মিরপুর থেকে আমরাই সবাই মিলে শাড়ি পছন্দ করে এনেছি আর এলিফ্যান্ট রোড থেকে ববির চুড়িদার নাগরাই,টোপর আর বেশ কাজ করা শেরওয়ানী। মনসুর ভবন থেকে নিজেরাও পোশাক আশাকাদি খরিদ করেছি।
সন্ধ্যের শুরুতেই ঝলমলে উৎসবের শুরু। পোলাপান তারাবাতি আর পটকা ফোটাচ্ছে। দিনের বেলায় রঙ টঙ ছেটানোর রব উঠেছিল কিন্তু মুরুব্বিদের চোখ রাঙ্গানীতে সেটা ভেস্তে গেছে।
আজ শুধুমাত্র বিয়ে আর বাসর(!) বৌভাত হবে কালকে!
বাড়ির অল্পবয়সী ছেলে মেয়ে আর বন্ধুরা মিলে ফুল দিয়ে হিন্দি সিনেমা স্টাইলে একটা বাসরঘর সাজানোর চেষ্টা করেছে। আমিও খানিকটা হাত লাগিয়েছিলাম। গাঁদা ফুলগুলো বেশিরভাগ শুকিয়ে গেছে, গোলাপের পাপড়ি কিছুটা নেতিয়ে গেলেও চলনসই একটা কিছু হয়েছে।
ছাদে গতকালের স্টেজেই বিয়ের পরের ক্রিয়াকর্ম যাকে বলে ‘সাদী কি রসম’ সারা হবে। সারা দেশ জুড়ে হিন্দি সিনেমার বাতাস লেগেছে তখন। ‘দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের’ অনুকরণে মধ্যবিত্ত উচ্চ মধ্যবিত্তরা বিয়ের এন্তেজাম করে।
সমস্যা হচ্ছে বর পক্ষ আর কনে পক্ষ নিয়ে! গেট ধরবে কে? জুতা চুরি, হাত ধোয়া সহ কনে বাড়ির যাবতীয় মৌজ মাস্তি করবে কারা? বন্ধুদের কাজ কাম কম- কামলা খাটা আর গল্প গুজব করা ছাড়া তাদের অন্য কিছু করার নেই। একজনের কাজে সবাই মিলে ছুটছে।
কনে পক্ষ বিহীন বিয়ে বাড়ির মজাটা খানিকটা ম্লান হলেও বিদেশী কনে বলে পুরো আমেজ পালটে গেছে।
পার্লার থকে সাজুগুঁজু করে লাল বেনারসিতে আগুনে রূপে হাজির হোল এলিনা-তার রূপ দেখে আমার তাপমাত্রার পারদ চর চর করে বাড়তে লাগল। সে আমার দিকে তির্যক দৃষ্টি হেনে এমন এক বক্র হাসি দিল যা দেখে আমার উত্তেজনা বরফ জলে গলে গেল।
সে ঠিক আমার নাকের সামনে সটান এসে জিজ্ঞেস করল , কেমন লাগছে আমাকে?
কি বলব আমি? ফ্যাঁসফ্যাঁসে কণ্ঠে কোনমতে বললাম, সেই রকম সুন্দরী!
-ফের একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে সরে পড়ল সে। আর একরাতে পালটে যাওয়া সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি।
আমি উকিল বাপ বলে কথা সাক্ষী সাবুদের সাক্ষর, দেন মোহর থেকে শুরু করে কবুল তক আমার সরব উপস্থিতি থাকতে হবে। প্রেমিকাকে ত্যাগ করার শাস্তি এমন করে কেউ পেয়েছে বলে আমার জানা নেই! এমন অম্ল মধুর অত্যাচারে আমি ভীষণ বেকায়দায়- কিছুটা দিশেহারা!
দেনমোহর আর উসুল নিয়ে বেশ হাউকাউ করলাম- সাথে সুমন ও গলা বাড়াল। মুরুব্বী সেজে বেশ ভাব গম্ভীর ভঙ্গীতে এলিনার সই নিয়ে এসে নিজে সাক্ষর করলাম। বিয়ে পড়ানোর সময়ে ঘোমটাখানি কে যেন বেশী নামিয়ে দিয়েছিল- তাই কবুল শব্দ শুনতে পেলেও ওর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে পেলামনা বলে খানিকটা আফসোস হোল। তবে প্রশান্তি যে সেই মুহূর্তে সেও দেখেনি আমার রক্তহীন ফ্যাকাসে মুখাবয়ব আর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ!
-------------------------------------------
ববির নতুন ব্যবসা। হাতে সময় নিয়ে আসেনি একেবারে। বৌভাতের পরদিনই তার ফ্লাইট শিডিউল। বহু অনুরোধ করলাম ফিরা যাবার তারিখটা পেছানোর জন্য- এলিনাকে নিয়ে সীতাকুণ্ডে একবার বেড়িয়ে যাবার জন্য, সাথে এই সুযোগে কক্সবাজারে বাংলা হানিমুন ও হয়ে যাবে। কিন্তু ওর উপায় নেই- ফিরে যাওয়া নাকি খুব জরুরী।
ফ্লাইট ছিল সন্ধ্যে বেলায়। আমার গাড়িতে করে ওদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিলাম! গাড়ি থেকে নেমে ববি কোলাকুলি করে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে এগিয়ে গেল বিমানবন্দরের ডিপারচার গেইটের প্রবেশ মুখে। এলিনা একটু ধীরে সুস্থে নামল। তার পরনে বহু-রঙ্গা সালোয়ার কামিজ ওড়না ঠিক করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে!
বিদায়ের সময় ঠিক আমার নাকের সামনে এসে দাঁড়াল!
তার সেই ট্রিপিক্যাল গা জ্বালানো হাসিটা দিয়ে বলল, তুমি যা চেয়েছিলে আমি তাই করলাম। এখন খুশী-তো?? বিদায় হয়তো ফের কোনদিন দেখা হবে...বলেই সটান ঘুরে গট গট করে হেটে চলে গেল একবারের জন্য ফিরে তাকাল না!!
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link